গল্প-সংক্ষেপ
প্রেম এ উপন্যাসের মুল বিষয়। কবির নাম নিতাই। ঠাকুরঝিকে ভালবাসে নিতাই কিন্তু মনে মনে। ভালবাসা কি লুকানো যায়?ঠাকুরঝি তা বুঝে নেয় এবং তার আর নিতাইয়ের মাঝে গড়ে ওঠে এক অপার্থিব প্রেম। যে প্রেম সমাজের কেউ মেনে নিবে না। একসময় জানা জানি হয়ে যায় ঠাকুরঝির সাথে নিতাই এর সম্পর্কের কথা। অন্যের ঘরনীকে ভালবাসার দায় নিয়ে কবি চলে যায় গ্রাম ছেড়ে। যুক্ত হয় ঝুমুর দলের সাথে। এই দলে অনেকগুলো মেয়ে আছে। সেইসব মেয়েদের কাজ হলো অশ্লীল নাচ-গানের মাধ্যমে নিজেকে বিক্রি করা। এটাই তাদের প্রধান জীবিকা। সেই ঝুমুর দলের কবিয়াল হিসেবে যোগ দেয় নিতাই। শুরু হয় অন্য এক প্রেমের গল্প,অন্য এক কবির গল্প। এরকম অসাধারন কিছু কবিতাও আছে উপন্যাসটিতে।

পুরো গল্পটি এ নিতাইকে নিয়েই। তৎকালীন কবিগান এবং তা উপজীব্য করে কবি হতে ইচ্ছুক এক যুবকের সংগ্রামকে ভিত্ত করে আবর্তিত। যেখানে তার প্রেমের বিষয়গুলোও কবিতার মতো গুরুত্বপূর্ণ, কেননা কবির চরিত্র নির্মাণে সমস্তই সহায়ক। তৎকালীন সমাজের খাপখোলা চিত্রও দেখতে পেয়েছি স্পষ্ট। এক কথায়, এই উপন্যাস একটি জীবন্ত দীর্ঘশ্বাস। বাংলা সাহিত্যের এক অনবদ্য সৃষ্টি, 'কবি', যা একবার নয়, বহুবার পড়া যায়, এবং প্রতিবারেই নিত্যনতুন আবিষ্কারের আনন্দ উপভোগ করা যায়।



পাঠ প্রতিক্রিয়া
অনুভূতিরা কোথায় জন্ম নেয়? নাটক,সিনেমা,রকস্টারের কনসার্টে? প্রেমিক-প্রেমিকার আলিঙ্গনে? হয়ত। তবে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি অনুভূতিরা বোধকরি জন্মায় বইয়ের পাতায়। সাদা-কালো-লাল-নীল-ধূসর আর নাম না জানা কত রঙের অনুভূতি যে বইয়ের অক্ষর থেকে উঠে এসে মগজে আঘাত করে, এই পৃথিবীর ভাষায় তাদের সবার নাম দেয়াও সম্ভব নয়। এই পৃথিবীতে তারা জন্মায় না।

মানুষের জীবনে অনেক রকম দুঃখবোধ থাকেই। একরকম দুঃখ আছে,যেটা মানুষকে দুঃখবিলাসের আনন্দ দেয়। মানুষ একই সিনেমা বারবার দেখে, একই গান বারবার শোনে এবং একই বই বারবার পড়ে দুঃখ পায়। দুঃখ পেয়ে কাঁদে। এ কান্নায় আনন্দ পায়। দুঃখকে অনুভব করতে পারার আনন্দ। এ তাদের দুঃখ-আনন্দ মেশানো কান্না।

তারাশংকরের 'কবি' পড়ার পর আমার মগজে অন্য পৃথিবীর এক দুঃখের জন্ম হয়েছিল। বইটি পড়ার পর কয়েকদিন যে ভয়াবহ বিষাদের অনুভূতি আমার পৃথিবী নীল করে রেখেছিল, আজও সেই কথা মনে পড়লে  বেশ বিষণ্ণ হয়ে পড়ি। এই বিষাদ চোখে কান্না আনে না। কান্নাকাটিকে অনেক সময় ন্যাকামো বলেই মনে হয়। এই বিষাদ নিয়ে দুঃখবিলাস করা যায় না। কারণ, এটি এত সস্তা নয় । স্রষ্টার কাছে প্রার্থনার মত এই বিষাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়। হে বিষাদ, তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাও।

Post a Comment

Previous Post Next Post