একটা বই পড়ে শেষ করার পরের অনুভূতি যে এতটা মিশ্র, তা খুব কম সময়ই অনুভূত হয়েছে। 'শবনম' প্রেমের গল্প - ভালোবাসার গল্প, সেদিক থেকে শুধু গল্পের দিকে তাকালে কাহিনী সেকেলে তো বটেই, ভীষণ সাধারণও। এমনকি বইয়ের শেষ অংশের কাহিনীর টুইস্টও মোটেই নতুন নয়। এখনের জন্যেও না, এই বই লেখার সময়েও না।
আমার আবার একেবারে তুমুল প্রেমের বই হজম হয় কম। বছর তিনেক আগে নিমাই ভট্টাচার্যের 'মেমসাহেব' পড়ে বেশ বিরক্তই হয়েছিলাম। তার উপরে কবিতার সৌন্দর্য বোঝার ক্ষমতাও একটু কম আছে। পাঠ্যবইয়ের বাইরে কবিতাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি খুব অল্পদিন আগ থেকে। কাজেই, শবনম যে সময়ে সময়ে, বিশেষ করে মাঝের দিকে ভীষণ লুতুপুতু এবং কিছু ক্ষেত্রে হাস্যকর লেগেছে - তা প্রথমেই পাঠক হিসেবে নিজের দোষ হিসেবে ধরে নিয়ে কয়েকদিন অন্য বই পড়ে আবার ফেরত এসেছি।
বইটা পড়তে গিয়ে অনেকবার রবিঠাকুরের 'শেষের কবিতা'র কথা মনে পড়েছে। কাহিনীর মিল বা কোনো তুলনায় না, সে বইটা পড়তে গিয়েও প্রথমে এমন অসহায় বোধ করেছিলাম, তাই! মনে আছে প্রথমে পড়ি স্কুলের শেষে বা কলেজে। এত অবাক, হতাশ, আর বিরক্ত হয়েছিলাম যে তা বলার কথা না।
এই হাস্যকর বই নিয়ে এত মাতামাতি কেনো? কী আছে এর কাহিনীতে ? আর এত বড় বড় কবিতার মানে কি!

এর পরে বছরখানেক আগে বইটি আবার পড়লাম - বইটা কেমন চোখের সামনে বদলে গেল! এত সুন্দর ভাষা! এত গভীর উপলব্ধি! এত মুগ্ধতা! তারপরেও, কবিতার কিছু অংশ দ্রুত পড়ে গিয়েছিলাম স্বীকার করবো। কিছুদিন আগে একবার শ্রুতিনাটক শুনলাম - আমার সবচেয়ে পছন্দের অংশ হয়ে গেল ওই শেষের কবিতাখানি - ই। যখন সব ঘটনা আর চরিত্র আপন হয়ে গেলো, তখন কবিতার প্রতি বর্ণ নিজ নিজ অর্থ নিয়ে বাজতে লাগল কানে।
এই সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক বিশদ গল্পের মূল কথা একটাই - বই তো আগের মতোই আছে, বদলেছি আমি, আর আমার দৃষ্টিভঙ্গি আর উপলব্ধির ক্ষমতা।
'শবনম' পড়তে গিয়ে তাই যতবারই অভ্যস্ত সহজ পাঠক মন গল্পের দিকে মনোযোগ দিয়ে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিল, একটু জোর করেই ঘুরিয়ে এনেছি লেখনীর দিকে। প্রেমে যে জ্ঞানবুদ্ধি লোপ পায় - সে বাস্তব জীবনে টের না পেলেও গল্প - কবিতা - গান - চলচ্চিত্র - ইত্যাদিতে, এমনকি পত্রিকায় ও নজির তো কম দেখিনি!
সেই বিলুপ্তজ্ঞান সময়েও প্রতিটা অনুভূতি আর উপলব্ধির প্রকাশক কাব্য খুঁজে আনা একে যেমন গভীর ভাষাজ্ঞান আর সাহিত্যজ্ঞান এর পরিচায়ক, তেমনি সময়োপযোগী কাব্যচরণ মিলিয়ে আনা সূক্ষ্ম রসবোধেরও ফল।
তা সৈয়দ মুজতবা আলীর মধ্যে কখনও এর কোনোটারই কমতি ছিল না বলার দরকার পড়ে না! নিজের ফার্সি, এমনকি সংস্কৃত ও না জানার ফলে অনেক অংশ পড়ে কেমন অতৃপ্তি লেগেছে - অনুবাদ ভালো ছিলো সন্দেহ নেই, তবে কিছুক্ষণ পর পর লাইন পড়ে যাচ্ছি কিছুই না বুঝে, এতে অসহায় ধরনের লেগেছে।
তারপরেও, পুরো বই জুড়ে ভাষার মাধুর্য, সাধারণ দৃশ্য বর্ণনাতেও ভীষণ সুন্দর সব উপমা, কথোপকথনের মধ্যে উঠে আসা গভীর জীবনবোধ- এগুলোকে অস্বীকার করার উপায় নেই। সব কথার শেষ কথা, ভালো লাগুক আর খারাপ, বাংলা সাহিত্যে আগ্রহ থাকলে অবশ্যই পড়ার মতো বই এটা। আমি বেঁচে থাকলে কয়েক বছর পর আবার পড়ে দেখার ইচ্ছা আছে, এই বইও রবীন্দ্রনাথের 'শেষের কবিতা'র মত আমার সামনে বদলে যায় কি না- তা জানার জন্য।
আমার আবার একেবারে তুমুল প্রেমের বই হজম হয় কম। বছর তিনেক আগে নিমাই ভট্টাচার্যের 'মেমসাহেব' পড়ে বেশ বিরক্তই হয়েছিলাম। তার উপরে কবিতার সৌন্দর্য বোঝার ক্ষমতাও একটু কম আছে। পাঠ্যবইয়ের বাইরে কবিতাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি খুব অল্পদিন আগ থেকে। কাজেই, শবনম যে সময়ে সময়ে, বিশেষ করে মাঝের দিকে ভীষণ লুতুপুতু এবং কিছু ক্ষেত্রে হাস্যকর লেগেছে - তা প্রথমেই পাঠক হিসেবে নিজের দোষ হিসেবে ধরে নিয়ে কয়েকদিন অন্য বই পড়ে আবার ফেরত এসেছি।
বইটা পড়তে গিয়ে অনেকবার রবিঠাকুরের 'শেষের কবিতা'র কথা মনে পড়েছে। কাহিনীর মিল বা কোনো তুলনায় না, সে বইটা পড়তে গিয়েও প্রথমে এমন অসহায় বোধ করেছিলাম, তাই! মনে আছে প্রথমে পড়ি স্কুলের শেষে বা কলেজে। এত অবাক, হতাশ, আর বিরক্ত হয়েছিলাম যে তা বলার কথা না।
এই হাস্যকর বই নিয়ে এত মাতামাতি কেনো? কী আছে এর কাহিনীতে ? আর এত বড় বড় কবিতার মানে কি!
এর পরে বছরখানেক আগে বইটি আবার পড়লাম - বইটা কেমন চোখের সামনে বদলে গেল! এত সুন্দর ভাষা! এত গভীর উপলব্ধি! এত মুগ্ধতা! তারপরেও, কবিতার কিছু অংশ দ্রুত পড়ে গিয়েছিলাম স্বীকার করবো। কিছুদিন আগে একবার শ্রুতিনাটক শুনলাম - আমার সবচেয়ে পছন্দের অংশ হয়ে গেল ওই শেষের কবিতাখানি - ই। যখন সব ঘটনা আর চরিত্র আপন হয়ে গেলো, তখন কবিতার প্রতি বর্ণ নিজ নিজ অর্থ নিয়ে বাজতে লাগল কানে।
এই সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক বিশদ গল্পের মূল কথা একটাই - বই তো আগের মতোই আছে, বদলেছি আমি, আর আমার দৃষ্টিভঙ্গি আর উপলব্ধির ক্ষমতা।
'শবনম' পড়তে গিয়ে তাই যতবারই অভ্যস্ত সহজ পাঠক মন গল্পের দিকে মনোযোগ দিয়ে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিল, একটু জোর করেই ঘুরিয়ে এনেছি লেখনীর দিকে। প্রেমে যে জ্ঞানবুদ্ধি লোপ পায় - সে বাস্তব জীবনে টের না পেলেও গল্প - কবিতা - গান - চলচ্চিত্র - ইত্যাদিতে, এমনকি পত্রিকায় ও নজির তো কম দেখিনি!
সেই বিলুপ্তজ্ঞান সময়েও প্রতিটা অনুভূতি আর উপলব্ধির প্রকাশক কাব্য খুঁজে আনা একে যেমন গভীর ভাষাজ্ঞান আর সাহিত্যজ্ঞান এর পরিচায়ক, তেমনি সময়োপযোগী কাব্যচরণ মিলিয়ে আনা সূক্ষ্ম রসবোধেরও ফল।
তা সৈয়দ মুজতবা আলীর মধ্যে কখনও এর কোনোটারই কমতি ছিল না বলার দরকার পড়ে না! নিজের ফার্সি, এমনকি সংস্কৃত ও না জানার ফলে অনেক অংশ পড়ে কেমন অতৃপ্তি লেগেছে - অনুবাদ ভালো ছিলো সন্দেহ নেই, তবে কিছুক্ষণ পর পর লাইন পড়ে যাচ্ছি কিছুই না বুঝে, এতে অসহায় ধরনের লেগেছে।
তারপরেও, পুরো বই জুড়ে ভাষার মাধুর্য, সাধারণ দৃশ্য বর্ণনাতেও ভীষণ সুন্দর সব উপমা, কথোপকথনের মধ্যে উঠে আসা গভীর জীবনবোধ- এগুলোকে অস্বীকার করার উপায় নেই। সব কথার শেষ কথা, ভালো লাগুক আর খারাপ, বাংলা সাহিত্যে আগ্রহ থাকলে অবশ্যই পড়ার মতো বই এটা। আমি বেঁচে থাকলে কয়েক বছর পর আবার পড়ে দেখার ইচ্ছা আছে, এই বইও রবীন্দ্রনাথের 'শেষের কবিতা'র মত আমার সামনে বদলে যায় কি না- তা জানার জন্য।
Post a Comment