রোদ, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে পথে নামি
মানুষের সঙ্গ পেতে,
সাহচর্য পেতে,
বুকের মাঝে জেগে থাকা মন
এবং সর্বাঙ্গে স্পন্দিত হওয়া প্রাণকে
সজীব ও সতেজতায় ভরিয়ে রাখতে।
আর,
নিজেকে ভুলে থাকতে।

জগতের সম্রাট এখন আর নই
সন্ধ্যের বৃষ্টি নামার আগে অবশ্যি তা ছিলাম।
সারাটা দিন বেশ ছিলাম,
পুলক ঘিরে ছিল অস্তিত্বে।
ভোরে ঘুমে চির ধরতেই দেখি
আকাশটা রোদহীন, মেঘমেদুর,
সেই জমাটবদ্ধ মেঘের গভীর ছায়া নেমেছে চারপাশে।
কী যে তৃপ্তিবোধ হলো তখন!
বৃষ্টি নামতেই জেগে গেল উল্লাস!
জীবনে ফাঁকি নেই,
নেই অপূর্ণতা,
নিজের ঘরে বন্দি হয়ে থেকেও মনে হলো,
বাহিরের যে জগত বৃষ্টিজলে ভেসে যাচ্ছে,
তার সাথে আমার কোনো যোগই নেই!
ঘরে বন্দি থাকুক দেহ,
লক্ষকোটি বছর অমনি তৃপ্তি আর আনন্দের মাঝে
মন রাজত্ব করুক নিজের রাজ্যে।

অতঃপর দিনশেষে থেমে গেল বৃষ্টি,
মেঘের ওপারেও মিলিয়ে গেল রোদ।
মেঘের ছায়া কেটে গিয়ে ঘনাল সন্ধ্যের ছায়া।
তখন মনে হলো, একটু বেরিয়েই আসা যাক পৃথিবীর বুক থেকে,
তাতে যদি নিজের বুককে ভুলে থাকা যায়।

বৃষ্টিতে পথের হাওয়াও শীতল হয়ে এলো,
চৈত্রের শেষ দিনগুলি এভাবেই কেটে যাক তবে।
একা হাঁটতে গিয়েই লক্ষ্যে এলো,
আমার উদ্দেশ্যের থলিটা অপূর্ণই থেকে গেছে।
যাচ্ছি কোথায়?
যেখানেই যাই, যাব তো ভিখিরীর মতই।
যার কাছেই যাই, সে জানবে, আমি ভিখিরী।
সারাদিনের গৃহবন্দি সম্রাট,
সন্ধ্যেশেষে ভিখিরীই হয়ে যায়,
পথে নামলে ভিখিরীই হয়ে যায়,
নিজেকে ভুলতে ভিখিরীই হয়ে যায়।
সে ভিক্ষে করে মানুষের কথা ও হাসি।

তারা বুঝবে না,
কী করে পুরো দিন গৃহবন্দি থেকেও
একাই একশ' হয়ে
পরিপূর্ণতায় ভরিয়ে রেখেছি নিজের জগত।
তারা এও বুঝবে না,
কী করে আবার গেলাম একা হয়ে,
দু'টি কথা বলার সুযোগ নেই বলে
কেমন অভিমানে বুকটা গেছে ভরে।

যদি নাও বুঝে কেউ,
তাতে কি কিছু এসে যায়?
নিজেকে যে ভুলতে এসেছে,
তাকে যদি মানুষ মনে করে,
সে ভোলাতে এসেছে অন্যদের,
তাতেও কি আছে ক্ষতি?

হয়ত তারা হাসবে
মনে মনে,
না হয় বলবে
মনে মনে,
"হে আত্মভোলা পুরুষ,
তোমার এতদিনকার উদাসী অবহেলার ফাঁকিটা
আজ তবে ধরাই পড়ে গেল!"

ধরাই পড়ে গেলাম।
তবুও নিজেকে ভুলতেই তো শরণ নিই মানুষের।
তারাও করুণা করে সঙ্গ ও সাহচর্যের মালা পরিয়ে।
আমরণ এই বোধটাই
সকল যুবকমনে চিরন্তন হয়ে রবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post