পেয়েছি দেখা বহু দু'পেয়ে মানুষের,
যারা এসেছিল আমার বুকের মাঝে বিরাজ করা
বিশ্বাসের পরিধি, পুরুত্ব পরিমাপ করতে।
তারা আমায় বলেছে, বিশ্বাস যেন রাখি তাদের উপর,
খুব বিনীত, কোমল গলায়।
আমিও একই গলাতেই সেই আহ্বান জানিয়েছি।
সেটি দিয়েছি, তবে পাইনি একইভাবে।

স্মৃতি হাতড়ালে পড়ে মনে,
যখন আমার পিঠের দৃঢ় অংশটুকু ঠেকে গিয়েছিল ওই মসৃণ তবে প্রতিবন্ধকতার প্রতীক, দেয়ালে;
যখন বুকের, মগজের সমস্ত অনুভূতি সেই বিষণ্ণতার থলেতে এসে হচ্ছিল জমা;
যখন তিলে তিলে গড়া সেই ছোট্ট স্বপ্নগুলো প্রায় ভেঙ্গে পড়ছিল;
তখনই সেই দু'পেয়ে,
বিশ্বাসের মর্যাদা না রাখা মানুষগুলো,
দেখিয়ে দিল তাদের স্বরূপ।
স্রষ্টা খুব যত্ন করেই গড়েছিলেন তাদের।
খুঁতহীন সেই মুখটা ছিল মুখোশ,
যা চোখে পড়েনি অবিবেচনার দরুণ।

তাদেরই একজনকে যখন বলেছিলাম, সাথে থেকো,
সে জবাবে জানাল,
"দেখুন, আমি ভীষণ বাস্তববাদী।
আপনি যেভাবে বললেন, সেভাবে জীবনটা আগায় না!"
খুব দাম্ভিকতার সাথে উচ্চারণ করা এই আপ্তবাক্যটুকু শুনে মনে হলো
যেন আমার জীবনে যত ধাক্কা ও ট্র‍্যাজেডি এসেছে,
তা রূপকথার সেই কল্পবাস্তবতা হতে;
যেন গল্প লেখার বেলায় আমি যেভাবে জন্ম দিই অজস্র চরিত্রের,
তেমনই জন্ম দিয়েছি নিজের সমস্ত স্বপ্নভঙ্গের দুর্ঘটনাগুলোকে।
এসব যেন পুরোটাই অবাস্তব,
যেন প্রেমকাব্যের প্রেমময় উপমা,
যেন আমি-তুমি-তুমি-আমির পারমুটেশন-কম্বিনেশন;
যেন আমার রাত্রিপ্রলাপ,
দিনের বাজে আলাপ।

দাঁড়ায়নি তারা,
পাশে কিবা সম্মুখে।
বরং আমার দাঁড়িয়ে যাওয়া দেখে ছুটে গিয়েছে দূরে,
বহুদূরে!
আড়াল করেছে নিজেদের,
যেন তাদের টি-শার্ট
কিবা ওড়নার আঁচলটুকুও আমি আর দেখতে না পাই।

অথচ আজ সেই প্রস্থানে হারিয়ে যাওয়া
দু'পেয়ে প্রাণিগুলোর কথা ভেবে
অশ্রু ফেলার অজস্র সময়
কী করে যে আমি বের করে আনি,
এ ভেবে নিজেকেই ধিকৃত করি।

বিকৃত মানসিকতার প্রাণির জন্যে
চোখের নোনা জল ফেলতে নেই।
ফেলেছি আগেও,
সব বুঝেও,
হয়ত মনের দুর্বলতায়,
কিবা জল ফেলার নিয়ম রক্ষায়।
হয়ত মনের এক কোণে এমন এক ইচ্ছে করে বাস,
যা চায়, তাদের যেন আমি ক্ষমা করে দিই।
ক্ষমাশীল হতে গিয়েও আর পারি না হতে।
তারা তো কষ্ট পাচ্ছে না।
আমি তো নেই তাদের স্মৃতিতেই!
তবে তারা কেন আমার চোখের জলের নেপথ্য কারণ হবে?
তবুও কাঁদি,
অবসরে দুঃখবিলাস করি,
যেন জগতের সেরা দুঃখী আমি!

ঠিক এমনই গাঢ় বিষাদের ক্ষণে
তোমার সাথেই হয়ে গেল আমার মধুর পরিচয়। 

Post a Comment

Previous Post Next Post