রাতজাগা পাখিদের গল্প শুনতে যাই আমি। তারা রাতের গল্প করে। রাতের প্রতিটি নিগূঢ় স্তব্ধতার শামিয়ানার নিচে তারা গল্পের পসরা সাজিয়ে বসে। সেই গল্পে আছে কান্না-হাসি, বেদনা-আনন্দ। কান্নাটা আগে টানলাম, কারণ রাতজাগা পাখিদের অনেকেই শুধু কাঁদে। বেদনাকেই আগে তুললাম, কারণ বেদনা হলো রাতজাগা পাখিদের নিত্যসঙ্গী। হাসি-আনন্দ তো রাতজাগা পাখিদের সংখ্যাগরিষ্ঠের বৈশিষ্ট্য নয়। তারা শুধু বিরহবিধুর চিন্তাতে ডুবেই যাবতীয় গল্প লেখে।
সেই গল্প শুনতে যাই আমি।
সেই গল্প শুনতে যাই আমি।
রাতজাগা কোনো পাখি কিছু বার্তা শোনাতে চায়। সূর্যের দিনলিপি তারা লেখে আঁধারের কাছ থেকে কালি ধার করে। সেই দিনলিপি আকাশের কাছে ছড়িয়ে দিয়ে এক তৃপ্তিবোধে ডুবে পড়ে তারা। 
আমি সেই দিনলিপির এক ঝলক দেখতে যাই।
আমি সেই দিনলিপির এক ঝলক দেখতে যাই।
কালো মানুষগুলো আঁধারের আঁধারে প্রায় অদৃশ্যই হয়ে থাকে। তাদের দেখা যায় না। এতে তাদেরই সুবিধে হয়। গল্পের শ্রোতাদের মাঝে তারা অলক্ষ্যেই থেকে যায়। শুধু গল্পের কোনো অশ্রুধারাময় বর্ণনায় তারা খানিকক্ষণের জন্যে উঠে দাঁড়িয়ে এক কোণায় চলে গিয়ে অশ্রুটুকুর সাথে কিছু পরিমাণ গ্লানিও ফেলে দিয়ে আসে। আমি চেয়ে থাকি তাদের দিকে। কারণ আমি তাদের দেখতে পাই। আমরা একে অপরদের দেখতে পাই। শুধু আমাদের কেউ দেখতে পায় না আঁধারে। 
গল্প বলা শেষ হয় একটা সময়ে। গল্পের ইতি টানা হয় ছোটগল্পের ইতি টানার মত করেই। "শেষ হইয়াও হইলো না শেষ" রবীঠাকুরের সেই পঙক্তি মাথায় নিয়ে সকলে ওঠে দাঁড়ায়। রাতজাগা পাখিরা গল্পের পসরা গুছিয়ে নেয়। তাদের ব্যস্তসমস্ত ডানায় আমি তাকিয়ে থাকি। এই ডানা দিয়েই তো কতশত গল্প তারা লিখেছে। এই ডানার প্রতিটা পালকই তো বোধহয় কালিতে ডুবে কলম হয়ে পড়েছে। 
আমি তাদের শুধাই, "কাল আবার আসছো তো?" তারা জবাবে প্রশ্ন ছুঁড়ে, "তুমি আসছো তো?!" আমি জবাব দিতে পারি না। তারা বলেই চলে, "তুমি আসলেই আমাদের পাবে, না আসলে পাবে না।" তাদের এই কথাটা বেশ ভারী লাগে আমার বোধে। আমি ফিরে আসি।
আমি তাদের শুধাই, "কাল আবার আসছো তো?" তারা জবাবে প্রশ্ন ছুঁড়ে, "তুমি আসছো তো?!" আমি জবাব দিতে পারি না। তারা বলেই চলে, "তুমি আসলেই আমাদের পাবে, না আসলে পাবে না।" তাদের এই কথাটা বেশ ভারী লাগে আমার বোধে। আমি ফিরে আসি।
পরের রাতে আমি জুতো পায়ে দিই। হেঁটে যাই। রাতজাগা পাখিদের গল্প শুনতে যাই আমি। তারা রাতের গল্প করে। 
Post a Comment