কালো আকাশ, তারাময় ছিল গতকালও,
বুকের মধ্যে আশা ছিল গতকালও,
মেঘের বৃষ্টির দেখা ছিল না গতকালও,
চোখের বৃষ্টির ধারা ছিল না গতকালও,
কারণ, প্রিয় মানুষটা এই রিক্ত বিছানায়,
এই শূন্য বিছানায়, এই শূন্য বালিশে মাথা রেখে,
লম্বা হয়ে শুয়েছিল গতকালও।

প্রভাতকিরণ ছিল আজ সকালেও,
জানালা গলে বালিশের উপরেই
ঘুমন্তেরা জেগেছিল সেই সকালেই
ক্লান্তরা শুতে যাচ্ছিল রাত্রি ধকলেও।

ধীরে ধীরে পড়ছিল তাঁর নিঃশ্বাস,
জীবনের প্রতি ছিল তাঁর বিশ্বাস,
শেষে এসে উঠে পড়লো নাভিশ্বাস,
আত্না বেরোল তাঁর, মিছে করে আশ্বাস।

ছোটরাও জানত,
বড়রাও জানতেন,
তিনি খুব জলদিই ফিরে যাবেন;
সহজাত বেদনায়,
বিষণ্ণ কান্নায়,
সকলকে তিনি এই ভাসিয়ে যাবেন।

সৎকারের সব প্রস্তুতিপর্ব
হচ্ছিল সম্পন্ন,
চেয়ে চেয়ে তাঁর রক্তশূন্য মুখে
সবে হচ্ছিল অপ্রসন্ন।

খাটিয়া আনা হলো,
তাতে তাঁকে রাখা হলো,
ছিটানো হলো গোলাপের জল আর আতর;
কাঁধে তাঁকে নেয়া হলো,
তখনই ঠিক মনে হলো,
যাচ্ছেন ফিরে তিনি গুটিয়ে সব আদর।

পিতৃতুল্য তিনি,
পিতৃসম স্নেহ,
আজ অসার দেহ,
তাঁর গুণ গুনি।
লিকলিকে স্মৃতিসব,
করে যায় কলরব,
সকলেই করে যাক
আমি শুধু শুনি।

শূন্য হয়ে আছে এই বিছানা,
হয়ত আমায় বলছে, 'কেঁদো না।'
আমি জানতাম তাঁর অন্তিম পরিণতি
তবু তাঁর চলে যাওয়ায় থামলো আমারই গতি।

বছরের প্রারম্ভেই হারিয়েছি আরেক মা'কে
কে জানত, অল্প সময়ের মাঝে হারাবোও তোমাকে?
আজ তাই অর্ধাঙ্গ কেঁদে যায় স্মৃতিচারণেই
শুধু সে একা নয়, সকলেই, তোমারই মরণেই।

(ক'দিন বাদে)
আয়নায় মুখখানা দেখে নিলাম,
দেখেই বুঝেছি, কত কেঁদেছিলাম।
চোখমুখ ফুলে গেছে,
আরো কত ঝড় গেছে,
শান্তিজল যেন ঝরে পড়ছে,
আজও যেন অশ্রুজল বেয়ে নামছে।

বড় ফ্রেমের সেই প্লাস পাওয়ারের
চোখ আবরণী,
চোখে পুরে নিয়ে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে
ভুলে যত শিহরণী।

কুটতর্কের সেই জগতে
আবারও যে যেতে হবে,
কবে যে এই বিষাক্ত জগত
ছেড়েছুড়ে যাওয়া হবে!

বিদায়ের বাজেনি ঘণ্টা
বিষণ্ণ থাকে এই মনটা।
সেই মানুষটা আছেন কেমন?
তিনি আছেন, ছিলেন যেমন।



Post a Comment

Previous Post Next Post